আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়া আরবি বাংলা অর্থসহ

আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়া আরবি বাংলা অর্থসহ জেনে নিন

আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়া আরবি বাংলা অর্থসহ

প্রথমত আমরা জেনে নেই আস্তাগফিরুল্লাহ শব্দের অর্থ কি? 

আস্তাগফিরুল্লাহ শব্দের অর্থ হল আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। মূলত প্রতিনিয়ত আমরা অসংখ্য গুনাহ করে থাকি।

আর একবার আস্তাগফিরুল্লাহ বলার কারনে একটি গুনাহ মোচন করা হয়। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি ফরজ নামাজের পরে আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করতেন।

আমাদের নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেন তোমরা তোমাদের রবের কাছে তাওবা করো এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। যেখানে আমাদের প্রিয় নবীর জীবনে কোন গুনাহ নেই তারপরও তিনি প্রতিদিন ১০০ বার তাওবা করতেন এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতেন। তাহলে আমরা বুঝতেই পারছি আস্তাগফিরুল্লাহ অথবা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। 

আল্লাহর কাছে আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া হচ্ছে ক্ষমা কারণ গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার বিকল্প নেই। কুরআন এবং হাদিস অনুযায়ী আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার অসংখ্য দোয়া রয়েছে তবে তার মাঝে সবচেয়ে প্রচলিত দোয়াটি হলো আস্তাগফিরুল্লাহ। 

আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়ার আরবি বাংলা উচ্চারণ

আসতাগফিরুল্লাহ একটি আরবি শব্দ যা ইসলামী ধর্মে ব্যবহৃত হয়। এর বাংলা অর্থ হল "ক্ষমা করুন" বা "মাফ করুন"। ইসলামে এটি প্রায় সমস্ত ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত হয়।


 আরবী ঃ

 أَستَغْفِرُ اللهَ

উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহ।’

অর্থ: আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

পড়ার নিয়ম: আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর এই দোয়াটি ৩ বার পড়তেন।

আরবী ঃ

 أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ: ‘আস্‌তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।’

অর্থ: ‘আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি।’ (আয়াতুল কুরসি)

পড়ার নিয়ম: দিনের যে কোনো ইবাদত-বন্দেগি তথা ক্ষমা প্রার্থনার সময় এভাবে তাওবাহ করতে পারেন। হাদিসে এসেছে- এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)


আরবী ঃ

أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।

অর্থ: আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।

পড়ার নিয়ম: এ দোয়াটি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার পড়া উচিত। নবীজী হযরত মোহাম্মদ (সা.) প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবাহ ও ইসতেগফার করতেন।’ (বুখারি)

আরবীঃ 

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহ্দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগ্ফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দা আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গোনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।’

পড়ার নিয়ম: সকালে ও সন্ধ্যায় এ দোয়া পাঠ করা উচিত। কেননা হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি এ ইসতেগফার সকালে পড়ে আর সন্ধ্যার আগে মারা যায় কিংবা সন্ধ্যায় পড়ে সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে সে জান্নাতে যাবে।’ (বুখারি)


আরবীঃ 

رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ

উচ্চারণ : ‘রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম।’

অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়।

পড়ার নিয়ম: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)



আস্তাগফিরুল্লাহ এর ফজিলত

আসতাগফিরুল্লাহ একটি আরবি শব্দ যা ইসলামী ধর্মে ব্যবহৃত হয়। এর বাংলা অর্থ হল "ক্ষমা করুন" বা "মাফ করুন"। ইসলামে এটি প্রায় সমস্ত ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত হয়। আসতাগফিরুল্লাহ ব্যবহারের ফজিলত সম্পর্কে কিছু বিষয় নিচে দেওয়া হলো:

  • আসতাগফিরুল্লাহ ব্যবহার করা ইসলামে একটি পরিপূর্ণ সন্ধান। এটি প্রত্যেক ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত হয় এবং এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই করতে পারি।
  • আসতাগফিরুল্লাহ ব্যবহার করা মানব জীবনে সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে। যেমন, যখন আমরা কোন ভুল করি অথবা কোন দোষ করি, আসতাগফিরুল্লাহ ব্যবহার করে আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই করতে পারি।
  • আসতাগফিরুল্লাহ ব্যবহার করা আমাদের জীবনে সুখ ও শান্তি এনে দেয়।



আস্তাগফিরুল্লাহ এর ফজিলত নিয়ে কয়েকটি হাদিস নিম্নে দেওয়া হল:-

নবী করিম (সা.) বলেন, ‘হে লোকেরা, তোমরা তোমাদের রবের কাছে তওবা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাও। আমি প্রতিদিন ১০০ বার তওবা করি ও ক্ষমা চাই।’ (নাসাঈ)।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেউ সবসময় এস্তেগফার আঁকড়ে ধরলে আল্লাহ তার প্রতিটি সংকটে পথ খুলে দেন, তাকে সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করেন এবং তাকে এমনভাবে জীবিকা দান করেন, সে ধারণাও করতে পারে না।’ (আবু দাউদ)

অপর একটি হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো বান্দা গোনাহ করে বলল, হে রব, আমি পাপ করে ফেলেছি, আমাকে ক্ষমা করো। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা জেনেছে, তার একজন রব আছে, যিনি পাপ ক্ষমা করেন এবং পাকড়াও করেন। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম।’ (বোখারি ও মুসলিম)।

হাদিসে আরও এসেছে, ‘কেউ শুক্রবার ফজরের আগে যদি তিনবার বলে ‘আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হায়্যুল কায়্যুম ওয়া আতুবু ইলাইহি’ তবে তার গোনাহ সমুদ্রের ফেনা সমান হলেও তা ক্ষমা করে দেয়া হয়।’

আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহ হাদিসে কুদসিতে বলেন, ‘হে আমার বান্দা, তোমরা দিনে- রাতে ভুল করে থাক, আর আমি সব পাপ ক্ষমা করি। তাই তোমরা আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাদের ক্ষমা করব।’ (মুসলিম)।

উক্ত আলোচনা দ্বারা আমরা দেখতে পেলাম আস্তাগফিরুল্লাহর গুরুত্ব অপরিসীম। তাই বেশি বেশি আস্তাগফিরুল্লাহ পড়বো।


Previous Post Next Post