পবিত্র লাইলাতুল কদর আমল সমূহ || শবে কদরের রাতে যে সকল আমল করা উচিত।

পবিত্র লাইলাতুল কদর এর রাত ইসলামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতের একটি রাত এই রাত কে হাজার মাস থেকেও উত্তম বলা হয়ে থাকে। এই দিন বেশি বেশি নফল নামাজ ও সুন্নত আদায় করার মাধ্যমে আমরা আমাদের সকল গুণাহের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমা চাইলে তিনি (মহান আল্লাহ) অনেক সন্তুষ্ট্য হন।

পবিত্র লাইলাতুল কদর আমল সমূহ  শবে কদরের রাতে যে সকল আমল করা উচিত।

পবিত্র লাইলাতুল কদর সুচনা?

রমজানের মাসের যেই রাতে পবিত্র কোরআন শরীফ নাজিল হয় সেই রাত থেকেই মুলত পবিত্র লাইলাতুল কদর এর সুচনা।

হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর উপর পবিত্র কোরআন নাজিল হয় ৬১০ খ্রিস্টাব্দে যখন ফেরেশতা জিবরাইল ( جبريل) মক্কার হেরা পর্বতে সর্ব প্রথম মানব জাতির হেদায়াতের জন্য মহান আল্লাহ তা'য়ালার তরফ হতে পবিত্র কোরআনের সূরা আলাক্ব এর প্রথম পাঁচটি আয়াত তার (আল্লাহর) প্রিয় নবী মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পাঠ করান।

আল কোরআনের সুরা-২ আল বাকারা (মাদানি), রুকু: ২৩/৭, আয়াত: ১৮৫, মঞ্জিল: ১, পারা - ২ সাইয়াকুল, পৃষ্ঠা ২৯/৭ থেকে আমরা জানতে পারি মহান আল্লাহ ত'য়ালা রমজান মাসে পবিত্র কোরআন শরীফ নাজিল করেছ মানবের দিশারি ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনরুপে।

আরও পড়ুনঃ  আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়া আরবি বাংলা অর্থসহ

শবে কদরের রাত (পবিত্র লাইলাতুল কদর)

শবে কদর অথবা লাইলাতুন কদরের রাত ইসলামে অনেক সম্মানিত একটি রাত হিসেবে দেখা হয়। এই রাত-টির সম্মানে পবিত্র কোরআন -এ একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা ‘সূরাতুল কদর’ অবতীর্ণ হয়েছে। অন্যান্য রাতের মতো শবে কদরের রাতটি গভীর অন্ধকারে ঢেকে যাবে নাহ, ইবাদতের জন্য এই রাতটি অন্যান্য যেকোনো দিনের তুলনায় অধিক উত্তম। শুধু তাই নয়, ৩৬৫ দিনের মধ্যেও সবচেয়ে উত্তম রাত হলো শবে কদরের রাত বা লাইলাতুন কদরের রাত যা হাজার মাসের থেকে শেরা।

ইসলামে বলা হয়েছে, শবে কদরের রাতে সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। তদুপরি, পবিত্র কোরআন সহকারে একাধিক হাদিসের ভাবার্থ থেকে বোঝা যায় যে সর্বশক্তিমান আল্লাহ পবিত্র কোরান একটি বরকতময় রাতে (লাইলাতুল কদরের রাতে) নাজিল করেছেন যেই রাতে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ নির্ধারিত হয়।

এই বিষয়ে আরও জানতে গিয়ে আমরা আল কোরআন, সুরা-২ আল বাকারা (মাদানি), রুকু: ২৩/৭, আয়াত: ১৮৫, মঞ্জিল: ১, পারা: ২ সাইয়াকুল, পৃষ্ঠা ২৯/৭ থেকে পাইঃ

আল্লাহ তাআলা বলেন - ‘রমজান মাস! যেই মাসে পবিত্র কোরআন শরীফ নাজিল হয়েছে মানবের দিশারি ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনরূপে।’

সুতরাং, এই রাত হাজার মাসের তুলনায় উত্তম একটি রাত। আমাদের সকলেরই শবে কদরের রাতে বেশি বেশি সালাত আদায়ের মাধ্যমে আমরা মহান আল্লহর নিকট বেশি বেশি করে প্রার্থনা করবো।

শবে কদরের আমল সমূহ

শবে কদর বা পবিত্র লাইলাতুল কদর আমল সমুহ মুলত হলোঃ-


اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي (আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা'ফু আন্নি।)

অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল এবং নিশ্চই আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন, তাই আমাকে আপনি ক্ষমা করুন।’ (ইবনে মাজাহ: ৩৮৫০; আহমদ: ২৫৩৮৪)

পাশাপাশি হাদিসে চার দোয়ার সমন্বয়ে গঠন করা এই দোয়ার বিশেষ গুরুত্ব পাওয়া যায়ঃ

১) أشهد أن لا إله إلا الله (আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ)

অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মহান আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত আর কোনো অস্তিত্ব নেই।

২) أستغفر الله (আস্তাগফিরুল্লাহ)

অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

৩) أسألك الجنة (আসআলুকাল জান্নাহ)

অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে জান্নাত পাওয়ার ইচ্ছে রাখছি।

৪) أعوذ بك من النار (আ‘উযু বিকা মিনান্নার)

অর্থ: আমি তোমার (আল্লাহ তা'য়ালার) কাছে জাহান্নাম এর আজাব থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।

সূত্র: সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১৮৮৭

অথবা, আপনি চাইলে উক্ত দোয়ার বাক্যগুলো মিলিয়ে এভাবেও পাঠ করতে পারেন—

أشهد أن لا إله الا الله استغفر الله نسألك الجنة ونعوذ بك من النار

আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আসতাগফিরুল্লাহা নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনান্নার।

শবে কদরের রাত কবে?

শবে কদরের রাত রমজান মাসের শেষ দশদিনের বেজোড় তারিখের যেকোনো এক রাত হতে পারে। নির্দিষ্ট করে কোন রাত বা কতো তারিখে শবে কদর এটা বলা অনেকটা কঠিন। এই রাতটি বিশেষ হওয়ায় এই রাতের পরিবেশ বুঝে আমাদের ধরে নিতে হবে কোন রাতটি শবে কদরের রাত।

এই প্রসঙ্গে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: "তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদরকে সন্ধান করো।" এ রাতগুলো হতে পারে ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ রমজানের যেকোনো এক রাত হতে পারে। তবে এক্ষেত্রেও আমাদের মনে রাখতে হবে, আরবিতে রাতকে দিনের আগে গণনা করা হয়।

এমনকি এ রাতের উপস্থিতির সম্পর্কে কেউ জানতে পারলে তাকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ দোয়া পড়তে বলেছেন।

এই দোয়া সম্পর্কে তিরমিজি: ৩৫১৩ থেকে জানতে পারি - যখন নবীজির প্রিয় স্ত্রী মা হজরত আয়েশা (রা.) নবীজির কাছে জানতে চায় "কোন রাতটি লাইলাতুল কদর, তা যদি আমি জানতে পারি তখন কোন দোয়া পড়বো?" তখন প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দোয়াটি পড়তে বলেন -

اللَّهمَّ إنَّك عفُوٌّ كريمٌ تُحِبُّ العفْوَ، فاعْفُ عنِّي

(আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা'ফু আন্নি।)

অর্থাৎঃ 'হে আমার প্রতিপালম (আল্লাহ তা'য়ালা), আপনি মহান, নিশ্চই আপনি পরম ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা করতে পছন্দ করেন, তাই আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন।'

লাইলাতুল কদর চেনার উপায়?

ঠিক কোন রাত লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের রাত অন্যান্য রাতের মতো অন্ধকারে ঘিরাও হয় না। এই রাতে তাপমাত্রা হয় নাতিশীতোষ্ণ এবং সালাত আদায়ের জন্যেও লাইলাতুল কদরের রাত অন্যান্য যেকোনো দিনের তুলনায় অধিক উত্তম একটি রাত হয়।

এই সম্পর্কে আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন "তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদরকে সন্ধান করো।"

এথেকে বোঝা যায়, রমজান মাসের শেষ দশ বিজোড় সংখ্যার রোজার যেকোনো এক রাত শবে কদরের রাত হতে পারে। অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ রমজানের যেকোনো এক রাত আমাদের জন্য লাইলাতুল কদর এর রাত হতে পারে।

হাজার মাসের চেয়েও দামি লাইলাতুল কদর?

মানব জাতির দিক নির্দেশক হিসেবে মহান আল্লাহ তা'য়ালা হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর উপর রমজান মাসের কোনো এক রাতে পবিত্র কোরআন শরীফ নাজিল করেন। অতএব, এই রাতটি আমাদের নিকট লাইলাতুন কদরের রাত হিসেবে পরিচিত।

এই এই রাতের সম্মানে পবিত্র কোরআন -এ একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা ‘সূরাতুল কদর’ অবতীর্ণ হয়েছে। লাইলাতুল কদরের রাতকে ভাগ্য নির্ধারনের রাত ও বলা হয়, আবার এই রাতটি সালাত আদায়ের জন্য ৩৬৫ রাতের মধ্যে অধিক উত্তম। অতএব ইসলামে এ রাতের ফজিলত ও গুরুত্বের জন্য লাইলাতুল কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও দামি।

শেষ কথা

পবিত্র লাইলাতুল কদর ২০২৪ আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত হতে চলেছে। এই রাতে আমাদের বেশি বেশি করে শবে কদরের আমল পাঠ করতে হবে এবং মহান আল্লাহ তা'য়ালা কে সন্তুষ্ট করার লক্ষে নফল নামাজ আদায় করবো।

হাদিসের বিভিন্ন সুত্র ধরে জানতে পারি এই রাতে আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়। তাই এই রাতে পাক ও পবিত্র অবস্থায় বেশি বেশি সালাত আদায় করে আমরা আমাদের পুর্বের সকল গোণাহের জন্য মহান আল্লাহ তা'য়ালার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবো।

Previous Post Next Post