মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

মাসি-পিসি গল্পটি সমাজের একটি বাস্তব রুপ নিয়ে রচিত গল্প। এই গল্পে বাস্তবতার নির্মম পরিহাস উল্লেখিত। এবং নিখুঁত ভাবে সেটি গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।

মাসি-পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর জেনে নিন

 মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন- ১ নম্বর

সারাদিন চলে শেলী ও তার মায়ের কর্মযজ্ঞ। দুজনেই চা বিক্রেতা। থাকে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়লী বস্তিতে। স্বামীর নির্মম নির্যাতন সইতে না পেরে বেশ কিছুদিন হলো এসেছে মায়ের কাছে। কিন্তু তার মাও দুস্থ, অসহায়, কারণ তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে থাকে  কুমিল্লায়। ফিরেও তাকায় না তাদের দিকে। বস্তির জীর্ণ একটি কুঠিরে তাদের বসবাস, রাস্তার পাশে চলছে শেলীর জীবন সংগ্রাম, কিন্তু জীবন অ এখানেও নিরাপদ নয়। প্রায়ই বখাটেদের উৎপাত । 


ক. বাজারের তোলা নিয়ে মাসি-পিসির কার সঙ্গে ঝগড়া হয়?

খ. "গলা কেটে রক্ত দিয়ে সে ধার শোধ করা যদি বা সম্ভব, অন্ন দেওয়ার ক্ষমতা কোথায় পাবে।” উত্তটির ব্যাখ্যা দাও। 

গ. উদ্দীপকের শেলী 'মাসি-পিসি' গল্পের আহ্লাদির জীবন একই সুতোয় গাঁথা। - বর্ণনা কর।

ঘ. “সমাজে অন্ত্যজ শ্রেণির বেঁচে থাকার সংগ্রাম উদ্দীপক ও 'মাসি- পিসি' গল্পে সমভাবে উঠে এসেছে।”- তা বিশ্লেষণ কর।


মাসি-পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর- ১ নম্বর

ক) বাজারের তোলা নিয়ে মাসি-পিসির সরকার বাবুর সঙ্গে ঝগড়া হয় ।


খ) আলোচ্য বক্তব্যে দুর্ভিক্ষের সময়ে আহ্লাদির বাবার অন্ন সংস্থানের শোচনীয় অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে।

দুর্ভিক্ষের সময় আহ্লাদির বাবা আহ্লাদির মাসি-পিসির থাকাটা শুধু বরাদ্দ রেখে খাওয়াটা ছাঁটাই করে দিয়েছিল। তার পরও তার অবস্থা মোটেই ভালো ছিল না। অন্যদিকে জগুর নির্মম অত্যাচারে মরমর অবস্থায় আহ্লাদি এসে হাজির। মাসি-পিসির সেবাযত্নেই আহ্লাদি সেবার বেঁচে গিয়েছিল। আহ্লাদির বাবা-মাও সেটা স্বীকার করেছে, কিন্তু অন্নসংস্থানের ক্ষমতা তো তার নেই। এই অবস্থার কথা বিবেচনা করে তাই বলা হয়েছে- “গলা কেটে রক্ত দিয়ে সে ধার শোধ করা যদি-বা সম্ভব, অন্ন দেওয়ার ক্ষমতা কোথায় পাবে।”


গ) উদ্দীপকের শেলী মাসি-পিসি' গল্পের আহ্লাদির জীবনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। নারী এবং পুরুষ উভয়েরই সমাজে নিরাপদ চলাফেরার ব্যবস্থা করা উচিত। কিন্তু সমাজের সব স্তরের মানুষের সহযোগিতা ছাড়া মেয়েদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই সবাইকে একতাবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত ।

উদ্দীপকের শেলী স্বামীর দ্বারা নির্যাতিত হয়ে মায়ের কাছে আসে। তার মাও দুস্থ ও অসচ্ছল। তাই মা এবং মেয়েকে প্রতিদিনই সংগ্রাম করে বাঁচতে হয়। এরপরেও সে প্রতিনিয়ত নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। 'মাসি-পিসি' গল্পে আহ্লাদি তার স্বামীর দ্বারা নির্যাতিত হয়ে মাসি- পিসির কাছে চলে আসে। কিন্তু তারা দুজনে অসচ্ছল এবং একই সাথে সংগ্রামী। আহ্লাদি তাদের আশ্রয়েই থাকে এবং সেও গ্রামের দুষ্ট ও লম্পট লোকদের কুনজর এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। তাই বলা যায়, শেলী 'মাসি-পিসি' গল্পের আহ্লাদির জীবনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। 


ঘ) সমাজে অন্ত্যজ শ্রেণির বেঁচে থাকার সংগ্রাম উদ্দীপক ও 'মাসি- পিসি' গল্পে সমভাবে উঠে এসেছে- মন্তব্যটি যথার্থ।

সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে বাঁচে। তাদের প্রতি একটু সহানুভূতিশীল হলে তারা জীবনে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে। উদ্দীপকে শেলী এবং তার মায়ের জীবনসংগ্রাম ফুটে উঠেছে। তারা দুজনে অভাব ও অসচ্ছলতার সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে চলে । এরপরও তারা থেমে নেই। চালিয়ে যাচ্ছে তাদের জীবনসংগ্রাম 'মাসি-পিসি' গল্পে মাসি-পিসি ও আহ্লাদি তিনজনই জীবনের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে পথ চলে। তাদের জীবনে আসে হাজারো এই সমস্যা। কিন্তু তাদের জীবনসংগ্রাম থমে থাকে না।

উদ্দীপকে শেলী ও তার মায়ের জীবনসংগ্রাম বর্ণিত হয়েছে। মাসি-পিসি' গল্পে মাসি-পিসির সাথে আহ্লাদির জীবন জড়ানো এবং তাদের জীবনযুদ্ধের কথা প্রকাশ পেয়েছে। তাই বলা যায়, সমাজে অন্ত্যজ শ্রেণির বেঁচে থাকার সংগ্রাম উদ্দীপক ও 'মাসি-পিসি' গল্পে সমভাবে উঠে এসেছে।


আরো পড়ুন: সোনার তরী কবিতার mcq প্রশ্ন ও উত্তর 


মাসি-পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন- ২ নম্বর প্রশ্ন 


স্বামীর মৃত্যুর পর দশ বছরের মেয়ে রত্নাকে নিয়ে মহাবিপদে পড়ে আয়েশা । গ্রামের বখাটেরা আজেবাজে কথা বলে। কিন্তু আয়েশা হার মানে না। সে ঢাকায় গিয়ে পোশাক কারখানায় কাজ নেয় আর মেয়েকে ভালো স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়। এভাবেই সে জীবনের সাথে লড়াই করে টিকে থাকে।


ক. 'সালতি' কী?

খ. কেন মাসি-পিসি কানাইয়ের সাথে কাছারিবাড়ি যেতে রাজি হয়নি? বুঝিয়ে দাও।

গ. উদ্দীপকের আয়েশার সাথে 'মাসি-পিসি' গল্পের মাসি-পিসির সাদৃশ্য আলোচনা কর।

ঘ. “জীবনযুদ্ধের সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকটি 'মাসি-পিসি' গল্পের সম্পূর্ণ ভাবকে ধারণ করে না।”— বিশ্লেষণ কর। 



মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর- ২ নম্বর


ক) শালকাঠ নির্মিত বা তালকাঠের সরু ডোঙা বা নৌকা ।

খ) আহ্লাদির নিরাপত্তার কথা ভেবেই 'মাসি-পিসি কানাইয়ের সাথে যেতে রাজি হয়নি। আহ্লাদি তার মাসি-পিসির সাথে থাকত। একদিন রাতে কানাই- গোকুলের তিনজন পেয়াদা আসে মাসি-পিসিকে কাছারিবাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু মাসি-পিসি সেই তিনজন পেয়াদা সে গোকুলের তা ভালোভাবেই বুঝতে পারে। তারা আরও দেখতে পায় ডোবার ধারে কাঁঠাল গাছের ছায়ায় তিন-চারজন ঘুপটি মেরে থাকে। পরিস্থিতি দেখে মাসি-পিসি ভালোভাবেই বুঝতে পারে যে, তারা কানাইয়ের সাথে কাছারিবাড়িতে গেলে আড়ালে ঘুপটি মেরে লুকিয়ে থাকা লোকগুলো এসে আহ্লাদিকে তুলে নিয়ে যাবে। তাই রাতে কানাইয়ের সাথে মাসি-পিসি কাছারিবাড়ি যেতে রাজি হয়নি। 


গ) উদ্দীপকের আয়েশার সঙ্গে মাসি-পিসি' গল্পের মাসি-পিসির জীবনসংগ্রামের দিক দিয়ে সাদৃশ্য রয়েছে। আমাদের সমাজে বিধবা নারীদের অবস্থা খুব করুণ। এই নির্দয় সমাজ-সংসারে তাদের সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয় শত প্রতিকূলতার মধ্যে। তবুও তারা জীবনের কাছে হার মানে না। 'মাসি-পিসি' গল্পে দেখা যায়, নিঃস্ব, অসহায় বিধবা মাসি-পিসি জীবন বাঁচাতে ধান ভানে, কাঁথা সেলাই করে, ডালের বড়ি বিক্রয় করে, শহরে গিয়ে তরিতরকারি বিক্রয় করে। এত কিছুর মধ্যেও তারা স্বামীর নির্যাতনের শিকার পিতৃ-মাতৃহীন তরুণী আহ্লাদিকে আগলে রাখে। তারা অত্যাচারী স্বামী, লোভী জোতদার, গুন্ডা-বদমাশদের কাছ থেকে আহ্লাদিকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব পালন করে। তাদের টিকে থাকার এ কঠিন সংগ্রাম উদ্দীপকেও লক্ষ করা যায়। স্বামীর মৃত্যুর পর অসহায় আয়েশা পাঁচ বছরের কন্যাশিশুকে নিয়ে বিপদে পড়ে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আয়েশা বেঁচে থাকার স্বপ্ন হারিয়ে ফেলে না। পোশাক কারখানায় কাজ নিয়ে টিকে থাকে বৈরী সমাজের বুকে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের আয়েশার সঙ্গে 'মাসি-পিসি' গল্পের মাসি-পিসির জীবনসংগ্রামের সাদৃশ্য রয়েছে।


ঘ)  "জীবনযুদ্ধের সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকটি 'মাসি পিসি' গল্পের সম্পূর্ণ রূপ প্রকাশে ব্যর্থ।"- মন্তব্যটি যথার্থ।

জীবনের রয়েছে নানা বাঁক। প্রতিনিয়ত মানুষকে সেসব বাঁক পেরুতে হয়। তবুও বাঁচার স্বপ্ন দেখে মানুষ বাঁচে। শক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, শ্রম দিয়ে মানুষ টিকে থাকে এই হিংস্র সমাজে হায়নার মতো মানুষগুলোর ভিড়ে।

'মাসি পিসি' গল্পে দেখা যায়, মাসি-পিসি খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে । পিতৃ-মাতৃহীন আহ্লাদিকে অত্যাচারী স্বামী, লালসায় উন্মত্ত জোতদার, গুন্ডা-বদমাশদের হাত থেকে বাঁচাতে তাদের সংগ্রামী হতে হয়েছে। শ্বশুরের ঘরদুয়ার ও সামান্য জমিজমার লোভে আহ্লাদিকে জগুর বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়ার আগ্রহের বিষয় গল্পে বর্ণনা করা হয়েছে। এ ছাড়া কলেরার ছোবলে আহ্লাদি কীভাবে তার পিতামাতাকে হারিয়ে এতিম হয়েছে তার মর্মান্তিক বর্ণনা এবং দুর্ভিক্ষের কথাও গল্পে উল্লেখ রয়েছে। অন্যদিকে উদ্দীপকে কেবল বিধবা আয়েশার জীবনসংগ্রামের কথা আর সমাজের হিংস্রতার কথা বর্ণিত হয়েছে।

“মাসি-পিসি' গল্পে একাধিক বিষয়ের প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। কিন্তু . উদ্দীপকে কেবল আয়েশার কন্যাসন্তানকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় পতিত হওয়া ও পরিশ্রম করে তা থেকে উত্তরণের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। তাই আমরা বলতে পারি যেখানে গল্পে দুজন বিধবার মানবিক জীবনযুদ্ধ, অন্যায়ের প্রতিবাদ, দায়িত্বশীলতা, পরিশ্রম প্রকাশ পেয়েছে সেখানে উদ্দীপকে কেবল আয়েশার অসহায়ত্ব ও জীবনসংগ্রাম ফুটে ওঠায় তা গল্পের সম্পূর্ণ রূপ প্রকাশে ব্যর্থ। অতএব আলোচ্য মন্তব্যটি যথার্থ।


মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩ নম্বর


মিছিলটা তখন মেডিকেলের গেট পেরিয়ে কার্জন হলের কাছাকাছি এসে গেছে। তিনজন আমরা পাশাপাশি হাঁটছিলাম। রাহাত স্লোগান দিচ্ছিল। আর তপুর হাতে ছিল একটা মস্ত প্ল্যাকার্ড। তার ওপর লাল কালিতে লেখা ছিল, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। মিছিলটা হাইকোর্টের মোড়ে পৌঁছতে অকস্মাৎ আমাদের সামনের লোকগুলো চিৎকার করে পালাতে লাগল চারপাশে। ব্যাপারটা কী বুঝবার আগেই চেয়ে দেখি, প্লাকার্ডসহ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে তপু। কপালের ঠিক মাঝখানটায়, গোল একটা গর্ত। সে গর্ত দিয়ে রক্ত ঝরছে তার। 


ক. রেপুর পুরো নাম কী?

খ. “আমরা অনশন ভাঙব না”- উক্তিটি বুঝিয়ে দাও।

গ. উদ্দীপকের সাথে পাঠ্যবইয়ের বায়ান্নর দিনগুলো' শীর্ষক আত্মজীবনীমূলক রচনার পটভূমিগত অভিন্নতা রয়েছে।- মন্তব্যটি যাচাই কর।

ঘ. উদ্দীপকে গল্পকথকের জবানিতে বর্ণিত মহান একুশের ভাষাচিত্রটির সাথে 'বায়ান্নর দিনগুলো' রচনাটির কথক ও কাহিনির ভিন্নতাও রয়েছে। তোমার মতামতসহ মন্তব্যটি যাচাই কর। 


মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর- ৩ নম্বর


ক) রেণুর পুরো নাম শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। 


খ) "আমরা অনশন ভাঙব না”- উক্তিটিতে রাজবন্দিদের কারামুক্তির সংগ্রামী চেতনার দৃঢ়তা প্রকাশ পেয়েছে। ১৯৫২ সালে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সঙ্গীদের জেলে বন্দি করে রাখে। শাসকগোষ্ঠীর অপশাসন ও বিনাবিচারে বছরের পর বছর রাজবন্দিদের কারাগারে আটক রাখার প্রতিবাদে তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সহকর্মী মহিউদ্দিন আহমদ অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। তাঁরা আলোচনা করে ঠিক করেন, 'যাই হোক না কেন, আমরা অনশন ভাঙব না।' অর্থাৎ তাঁদের ন্যায্য দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁরা অনশন ভাঙবেন না।


গ) উদ্দীপকের সাথে পাঠ্যবইয়ের বায়ান্নর দিনগুলো' শীর্ষক আত্মজীবনীমূলক রচনার পটভূমিগত অভিন্নতা রয়েছে। ১৯৫২ সালে বাঙালি বীর সন্তানরা ভাষার জন্য প্রাণ দেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তাঁরা রাজপথে নামেন এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর গুলিতে সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না-জানা আরও অনেকে শহিদ হন।

উদ্দীপকের পটভূমি ও 'বায়ান্নর দিনগুলো' রচনার পটভূমি একই। উদ্দীপকের তপু, রাহাত এবং গল্পকথক সবাই ভাষার দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে নামেন। মিছিলে ছাত্র-জনতা স্লোগান দেন এবং প্ল্যাকার্ড হাতে এগিয়ে চলেন। সেই মিছিলে গুলিবর্ষণ হলে তপু শহিদ হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' গ্রন্থ থেকে সংকলিত 'বায়ান্নর দিনগুলো' রচনায় ১৯৫২ সালের রাজনৈতিক অবস্থা ফুটে উঠেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেলে বসেই বাইরের খবর পাচ্ছেন । ২১শে ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়, গুলিতে ছাত্র-জনতার মৃত্যুর খবরও তিনি পাচ্ছেন। এভাবেই তিনি তখন দেশের অবস্থা, রাজনীতি, সংগ্রামের কথা তুলে ধরেছেন তাঁর রচনায় । মূলত বায়ান্নর দিনগুলোই স্থান পেয়েছে সংকলনটিতে। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের 'বায়ান্নর দিনগুলো' শীর্ষক আত্মজীবনীমূলক রচনার পটভূমিগত অভিন্নতা রয়েছে।


ঘ) উদ্দীপকে গল্পকথকের জবানিতে বর্ণিত মহান একুশের ভাষাচিত্রটির সাথে 'বায়ান্নর দিনগুলো' রচনাটির কথক ও কাহিনির ভিন্নতাও রয়েছে।- মন্তব্যটি যথার্থ।

পৃথিবীতে বাঙালি বীরের জাতি। তাঁরা ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। ১৯৫২ সালে বাংলার সাহসী তরুণরা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথে মিছিলে নামেন। একুশে ফেব্রুয়ারিতে ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এতে সালাম, রফিক, বরকতসহ নাম না-জানা অনেকে শহিদ হন।

'বায়ান্নর দিনগুলো' রচনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জেলজীবন ও জেল থেকে মুক্তিলাভের স্মৃতি বিবৃত হয়েছে। এখানে ঢাকায় একুশে ফেব্রুয়ারি তারিখে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিবর্ষণের খবর বিবৃত হয়েছে। রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে অনশনরত অবস্থা, স্ত্রী-সন্তানদের কথা ইত্যাদিও তিনি তুলে ধরেছেন স্মৃতিচারণমূলক এ রচনায়। অন্যদিকে উদ্দীপকে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের কথা প্রকাশ পেয়েছে এবং গল্পকথকের জবানিতে ফুটে উঠেছে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্র-জনতার মিছিল, যে মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণ ও তাঁর বন্ধুর মৃত্যুর কথা।

উদ্দীপকে কেবল ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির দিন ভাষার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার কথা এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর গুলিবর্ষণের কথা বর্ণিত হয়েছে। অন্যদিকে বায়ান্নর দিনগুলো' রচনায়- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে বর্ণনা করেছেন দেশের তৎকালীন অবস্থা, নেতাদের দৃঢ়তা, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অপশাসন ইত্যাদি। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।


আরো পড়ুন: অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর 


মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন- ৪ নম্বর


১৯৭১ সালে দেশকে স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধে যেতে চায় রুমী। রুমীর মা প্রথমে তাকে বাধা দিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে বলেন। কিন্তু রুমী তার আদর্শ থেকে সরে আসতে নারাজ। তাই সে বলে পড়াশোনা শিখে হয়তো বড় হতে পারব, কিন্তু দেশের এই দুর্যোগময় মুহূর্তে যদি যুদ্ধে না যাই, তবে কোনো দিনও দেশের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না। মায়ের অনুমতিতে যুদ্ধে যায় রুমী। যুদ্ধ শেষে রুমী ভীষণ আহত হয়ে প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায় বাড়ি ফিরলে তাকে দেখে তার মা-বাবা কান্নায় ভেঙে পড়েন; বিলাপ করতে থাকেন। 


ক. শেখ মুজিব কখন ফরিদপুর পৌঁছেছিলেন?

খ. শেখ মুজিবের নাশতা করতে যাবার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা কর। 

গ. উদ্দীপকের রুমীর মধ্যে 'বায়ান্নর দিনগুলো' রচনার শেখ মুজিবুর রহমান চরিত্রের কোন বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যায়?

ঘ. উদ্দীপকের রুমীর পরিবার ও বায়ান্নর দিনগুলো' রচনার শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের মানুষগুলোকে একসূত্রে গাঁথা যায় কি? যুক্তিসহ তা আলোচনা কর।


মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর- ৪ নম্বর


ক) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাত চারটায় ফরিদপুর পৌঁছেছিলেন। 


খ) সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা করাই ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাশতা করতে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী অন্যায়ভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জেলে বন্দি করে। শাসকগোষ্ঠীর অপশাসন ও বিনাবিচারে বছরের পর বছর রাজবন্দিদের কারাগারে আটক রাখার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু অনশন ধর্মঘট করেন। তাঁকে ঢাকা সেন্ট্রাল জেল থেকে ফরিদপুর জেলে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু তাঁদের জাহাজ রাতে ফরিদপুর পৌঁছলে সেই রাতে জেল কর্তৃপক্ষ তাদের গ্রহণ করেন না। ফলে তাদের পুলিশ ব্যারাকে থাকতে হয়। সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুবেদারকে প্রস্তাব করেন নাস্তা খাওয়ার জন্য। তাঁর নাস্তা খেতে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল সেখানে সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় তিনি ফরিদপুর জেলে আছেন এবং অনশন ধর্মঘট করছেন এটা জানতে পারে।


গ) উদ্দীপকের রুমীর মধ্যে 'বায়ান্নর দিনগুলো' রচনার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যায়। একটি রাষ্ট্রের শাসকের উচিত সেই দেশের অধিবাসীদের সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। শাসকগোষ্ঠী যখন স্বার্থান্ধ হয়ে স্বৈরশাসকে রূপ নেয়, তখন তারা সাধারণ মানুষের ওপর চালায় অত্যাচার আর নির্যাতন। অস্ত্র ও ক্ষমতার জোরে তারা জনসাধারণের দাবিকে দমিয়ে রাখে।

'বায়ান্নর দিনগুলো' রচনায় বাংলাদেশের মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসীম ত্যাগ স্বীকার করার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির প্রাণের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে অস্বীকার করে। এর বিরুদ্ধে বাঙালিরা আন্দোলন শুরু করে। তখন শাসকগোষ্ঠী বাঙালির ওপর অকথ্য নির্যাতন চালায়। তারা বাঙালির প্রাণের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেককেই জেলে বন্দি করে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর এই অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে জেলে অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। অবশেষে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী অর্ধমৃত অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। উদ্দীপকেও দেখা যায় দেশপ্রেমিক রুমীকে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনারা যখন এদেশের মানুষের ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালাতে শুরু করে, তখন দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে রুমী পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। যুদ্ধ শেষে রুমী ভীষণ আহত হয়ে অর্ধমৃত অবস্থায় বাড়ি ফিরে আসেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ ও দেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম করার বৈশিষ্ট্যটি তাই উদ্দীপকের রুমীর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়।


ঘ) উদ্দীপকের রুমীর পরিবার ও বায়ান্নর দিনগুলো' রচনার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের মানুষগুলোকে একসূত্রে গাঁথা যায়। জননী কিংবা জন্মভূমি যখন বিপদাপন্ন তখন কোনো বিবেকবান সন্তানই চুপ করে থাকতে পারেন না। অসীম সাহস আর দেশপ্রেম নিয়ে জন্মভূমিকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য তারা ঝাঁপিয়ে পড়েন। এতে অনেকেই জীবন দেন, আবার কেউ হন আহত। তবুও জননী, "জন্মভূমির জন্য যুদ্ধ করায় তাঁরা তাঁদের জীবনকে সার্থক মনে করেন।

'বায়ান্নর দিনগুলো' রচনায় দেখা যায়, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেককেই বিনাবিচারে ও অন্যায়ভাবে জেলে আটক রাখে। জেলে বঙ্গবন্ধু তাঁর সহকর্মীসহ বাঙালির ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার ও অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে অনশন ধর্মঘট পালন করেন। প্রিয় সন্তানের সন্ধান পেতে বঙ্গবন্ধুর বাবা দিনের পর দিন ছুটে বেড়িয়েছেন। মৃতপ্রায় সন্তানকে জেলগেটে দেখার পর কোনোমতে চোখের পানি মোছেন। বহুদিন পর স্বামীকে দেখতে পেয়ে বঙ্গবন্ধু স্ত্রী কেঁদে ফেললেন। ছেলে কামাল বাবাকে অনেক দিন দেখতে না পেয়ে তাঁর চেহারাই ভুলে গেছেন। এমনই করুণ অবস্থার বর্ণনা রয়েছে উদ্দীপকে। সেখানে ১৯৭১ সালে মায়ের অনুমতি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন রুমী। যুদ্ধে আহত সন্তানকে অর্ধমৃত অবস্থায় দেখে রুমীর মা-বাবা কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রিয় সন্তানের এমন অবস্থার জন্য তারা বিলাপ করতে থাকেন।

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অপশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও উদ্দীপকের রুমী। উভয়ের পরিবারের সদস্যদের একই কারণে সহ্য কষ্ট করতে হয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের রুমীর পরিবার ও বায়ান্নর দিনগুলো' রচনার বঙ্গবন্ধু শেখ  মুজিবুর রহমানের পরিবারের মানুষগুলোকে একসূত্রে গাঁথা যায়।

Previous Post Next Post